ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন তার বাসায় দায়িত্ব পালন করা গৃহকর্মী পিংকি আক্তার।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল ৫ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরীমনির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তিনি। গৃহকর্মী পিংকি আক্তারের ভাষ্য, ‘‘পরীমনি আমাকে মারছে আর বলছে, তুই কি করতে পারবি। তোরে মাইরা যদি বক্সে ভইরা রাখি আমার দুই কোটি টাকা যাবে, আর কিছুই হবে না। বাচ্চার খাবার ইস্যু করে আমাকে নির্যাতন করছে। সাধারণত বাচ্চাকে দুই ঘণ্টা পর পর সলিড খাবার দিতে হয়। যখন আমি বাচ্চাকে খাবার দিচ্ছিলাম তখন দুই ঘণ্টা হয় নাই। বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট বাকি আছে।’’
পিংকি আক্তার অভিযোগ করেন, পরীমণি একটি বাচ্চা দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত করার কথা বলে পরে বাসার সব কাজ করিয়েছেন।পিংকি আক্তার বলেন, ‘‘ উনি আমাকে বলে নিছে শুধু একটা বাচ্চার কাজ করার জন্য। কিন্তু আমি উনার বাসায় যখন যাই আমাকে দুইটা বাচ্চা দেখাশোনা করা, রান্না করাসহ যাবতীয় কাজই করতে হয়। দেখা গেছে রান্না করার কিছু নাই বাজারের লিস্ট লিইখা বলছে, বাজারে যাওয়ার জন্য। আমি বাজারের লিস্ট লিখতেছি, কি কি লাগবে।
সৌরভ বলতেছে, এইটা একটু পরে করো। আমি বলতেছি, ভাইয়া আপুতো বলতেছে এখনই দেওয়ার জন্য না হলে আবার আয়া বকাবকি শুরু করবো। আমার হয়ে গেছে আমি যাচ্ছি। তখন বলছে যে, ঠিক আছে। যখন আমি বাচ্চার কাছে যাই পনেরো থেকে বিশ মিনিট পরে আবার সৌরভ আসে। বললো যে, পিংকি ওকে একটু সলিড খাবার দাও। আমি বলছি, ভাইয়া বিশ মিনিট কি পঁচিশ মিনিট বাকি আছে তো সলিড খাবার একটু পরে দেই, এখন দুধ দেই। বাচ্চাটা আগে যে রাখতো, ও এরকমভাবে বাচ্চা কাঁদলে মাঝে মাঝে একটু দুধ দিতো। তার জন্য আমিও দুধ দিচ্ছি। হঠাৎ করে মেকআপ রুম থেকে বকে-বকে আসতেছে আবার বলতেছে, এই তুই কার কথায় দুধ দেছ। আমি আর কোনো কথা বলি নাই। আমার ধারে আইসে দাঁড়াইছে। বলতেছে যে, দুধ কি দিয়া বানাইছ? তখন আমি দুধ যেভাবে বানাই ওভাবে বলছি। পরে এইটা বলার পরে বলছে যে, তুই কার অনুমতিতে দুধ দিতেছোস? এই কথা বলে আমাকে থাপড়াইছে। কিন্তু সৌরভ দাঁড়িয়েছিলো, উনি কোনো কথাই বলে নাই। পরীকে ধরতেছেও না। আমি নিচে পড়তেছি আর উঠতেছি। এই রকম বিশ থেকে তিরিশ মিনিটের মতো আমাকে মারছে। ’’শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে পিংকি আক্তার তার এজেন্সিকে জানিয়ে কোনো সহযোগিতা পাননি বলেও জানিয়েছেন।
এরপর তিনি ৯৯৯- এ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছেন।পিংকি আক্তার বলেন, ‘‘আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। এরপর বৃষ্টি নামের আরেকটি মেয়ে ছিল। সে বলে যে আপু ওর অবস্থা অনেক খারাপ। আমার বাম চোখ ফুলে গিযেছিল। ও বরফ দিছে, নাপা খাওয়াইছে। এরপর আমি যখন একটু কথা বলতে পারছি তখন বলছিযে, আপু আমি আপনার পায়ে পড়ি হয়তো আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, না হয়তো ছেড়ে দেন। উনি গৃহকর্মীকে নির্যাতন করার পরেই তার ফোন নিয়ে নেয়।
কিন্তু আমার ফোন সাইলেন্ট করা ছিল, ওয়ারড্রোবের ভেতরে ছিল। আমি এজেন্সিকে ফোন দিছি। অনেক কান্নাকাটি করেছি। বলেছি আমাকে এক ঘণ্টার ভেতরে আইসা নিয়ে যান। নয়তো হাসপাতালে নিতে বলেন। উনি বলছে যে ঠিক আছে। এরপর দুই তিন ঘণ্টা চলে গেছে। এরপর নিরুপায় হযে আমি ত্রিপল নাইনে ফোন দেই। এরপর ভাটারা থানার এসআই আরিফুল ইসলাম, উনার ফোন নম্বর দেয়; উনাকে ফোন দেই। উনি বলছে, তোমাকে যে মারছে, যদি কোনো দাগ থাকে ছবি পাঠাও। চোখের ছবি দিলাম। পরীমনি যখন বুঝতে পেরেছে পুলিশ আসতেছে, তখন বৃষ্টিকে বলছে, ওকে বের করা তাড়াতাড়ি।’’
পিংকি আক্তারের আরও অভিযোগ, ‘‘বৃষ্টি আমাকে বোরকা পরার টাইমটাও দেয় নাই। নেমে আমি গেইটে দাঁড়িয়ে থাকি। পুলিশ এসে আমাকে দেখে। বলে, তুমি কি এখান থেকে যাইতে পারবা নাকি আমরা তোমাকে হেল্প করবো। আমি বলছি যেতে পারবো। রিকশায় যাওয়ার পথে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
রিকশাওয়ালা আমাকে সিএনজিতে তুলে দেয়। উনি আমাকে কুর্মিটোলা হসপিটালে নিয়ে যায়। ওখানে যাওয়ার পরে ডাক্তার দুইটা ইনজেকশন দেয়। একটু সুস্থ হওয়ার পরে উনারা আমাকে বলে, তোমাকে ঢাকা মেডিকেলে যেতে হবে। এখানে সিট নাই। ভর্তি নিতে পারছি না। এজেন্সিকে ফোন দেই, কিন্তু কেউ আসে নাই। দুই-তিন দিন অপেক্ষা করাইছে যে, উনারা কোনো একটা ডিসিশন নিবে। বিচার পাইয়ে দেবে। আমাকে বলে যে, বিষয়টা কোর্টে যাচ্ছে। কিন্তু কোর্ট থেকে আমাকে কোনো ফোন দেয় নাই। নিরুপায় হইয়া আমি মামলায় যাই।’’
উল্লেখ্য, পিংকি আক্তারের আনা অভিযোগ কতটা সত্য, তা এখনও প্রমাণিত নয়।